reorder disabled_by_default

রাজধানীতে জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধান, হোতাসহ আটক ৪

Update : 08 Jun 2024 - 3:07 PM    |     পঠিত হয়েছে: 18 বার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে দেশি-বিদেশি মুদ্রা তৈরি চক্রের মূলহোতা জাকিরসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন লিয়াকত হোসেন জাকির, তার দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ বেগম, লিমা আক্তার রিনা ও সাজেদা আক্তার।

শনিবার যাত্রাবাড়ীর কদমতলীতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।

ডিবি জানায়, বাজারে পাওয়া ২২ এমএম কাগজ, সাধারণ কালার ও প্রিন্টার দিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জাল টাকা ও ভারতীয় মুদ্রা তৈরি করে আসছিল এই চক্র। বাগেরহাটের কচুয়ার প্রত্যন্ত এলাকার বসে জাল টাকা তৈরি করতেন জাকির। এরপর তার ১৫ থেকে ২০ জন এজেন্টের মাধ্যমে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যেত সেই টাকা।

ঈদকে সামনে রেখে চক্রটি বিপুল পরিমাণ জাল টাকা বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে জানিয়েছেন অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা।

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ২০০, ৫০০, ১০০০ টাকা ও ভারতীয় ৫০০ রুপির বিপুল পরিমাণ জাল নোট উদ্ধার করা হয়। এছাড়া জাল টাকা তৈরিতে কাগজ, প্রিন্টারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

অভিযান শেষে দুপুরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিবির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান।

মশিউর রহমান বলেন, ‘লিয়াকত হোসেন জাকির অত্যন্ত দক্ষ একজন জাল টাকা প্রস্তুতকারী। দীর্ঘদিন ধরে জাল টাকা তৈরি করতেন। বর্তমানে সে জাল টাকা তৈরির পাশাপাশি ভারতীয় মুদ্রা রুপিও তৈরি করতেন।’

ডিবির এই কর্মকর্তা জানান, প্রযুক্তি বিচ্ছিন্ন থেকে দীর্ঘদিন ধরে জাকির জাল টাকা তৈরি করতেন। এমনকি বাঘেরহাটে গিয়ে জাল টাকা তৈরি করতেন। একাধিকবার তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালালেও তাকে ধরা যাচ্ছিল না। গত রোজার ঈদের আগে জাকিরের তৈরি করা টাকা পাইকারি ক্রেতা দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের সূত্রধরে বসুন্ধরা এলাকার এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, ‘এই নারী মাদকের একটি মামলায় কারাগারে গিয়ে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত হন। এরপর জামিনে এসে জাল টাকার কারবার শুরু করেন। ঈদকে সামনে রেখে তিনি বিপুল পরিমাণ জাল টাকা কেনার জন্য এসেছিলেন। তার সূত্র ধরে জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিপুল পরিমাণ জাল টাকা ও মুদ্রা তৈরির মেশিন উদ্ধার করা হয়।’

এই চক্রটি সাধারণত এক হাজার ও পাঁচশত টাকা তৈরি করলেও বর্তমানে তারা ২০০ টাকার জাল নোট তৈরি করছে। যা অত্যন্ত বিপদজনক।

জাল টাকা প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও আন্তরিক হওয়ার তাগিদ দিয়ে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘সারাবছর গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাতে হয়। নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন। কারণ এই চক্রগুলো সারা বছরই জাল টাকা তৈরি করে। কয়েকদিন আগে এক নারীই ৫০ লাখ টাকা নিয়েছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে তারা কী পরিমাণ জাল নোট বাজারে ছাড়ছে। এই চক্রের ১৫ থেকে ২০ জন এজেন্ট রয়েছে। যারা সারাদেশে জাল টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছে।’

উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান, ‘ঈদকে সামনে রেখে গরু ছাগল বিক্রি বা লেনদেনের সময়ে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে টাকা যাচাই করে নিতে হবে।’

গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘জাকির অত্যন্ত দক্ষ একজন জাল টাকা প্রস্তুতকারী কারিগর। তার চক্রের বহু নারী ও পুরুষ রয়েছে। কর্মচারীদের মাসে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা বেতন দিতেন জাকির। জাকির যে বাসায় অবস্থান করে জাল টাকা বানাতেন সেই বাসার আশেপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করতেন। যাতে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরতে না পারে। কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিত টের পেলেই পালিয়ে যেতেন। চতুর জাকির প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকতেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আইনে জাল টাকার মামলার বিচারে দ্রুত বিচার আদালত নেই। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে বিচারকাজ চলায় তারা কারাগার থেকে জামিনে এসে আবারও একই কাজে জড়িয়ে যায়। জাকির ডিএমপিসহ দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তর ৬ বার গ্রেপ্তার হয়েছে। তারপরও সে একই কাজ চালিয়ে আসছিলেন।’

এই বিভাগের আরও খবর